যে কারণে ডুবলো মমতাজের নৌকা

Jan 11, 2024 - 11:36
 0  20
যে কারণে ডুবলো মমতাজের নৌকা

২০০৮ সালে মমতাজ বেগম সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হন। পরবর্তীতে ২০১৪ ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে মানিকগঞ্জ- (সিংগাইর, হরিরামপুর সদরের তিনটি ইউনিয়ন) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করেন। দ্বাদশ নির্বাচনেও নৌকার টিকিট বাগিয়েও শেষ রক্ষা হলোনা মমতাজের। বিতর্কিত নানা কর্মকান্ডের কারণে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম হোঁচট খেলেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে।

স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নির্বাচনি আসনে রাজনৈতিক কোন্দল, জনপ্রতিনিধিদের অসম্মান, দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, এলাকায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা, পদ বাণিজ্য, কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়া, মা-বোনদের অস্বীকার করা ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়নের কারণেই ভোটারদের এমন ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে, দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু নিজ নির্বাচনি এলাকায় গত ২০ বছর ধরে নানা উন্নয়নমূলক কাজ, বেকার গরীরদের ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা বিতরণ, সামাজিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতাসহ নানা কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কারণেই নির্বাচনের মাঠে নবীন হলেও ভোটারদের পছন্দের তালিকায় সবার শীর্ষে ছিলেন তিনি। এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন, হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান মো. সায়েদুর রহমানসহ সিংগাইরের আট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নৌকা ছেড়ে ট্রাকে ওঠায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, ‘মমতাজ বেগম এই আসনে নানা কারণে মানুষের কাছে বিতর্কিত এটা সকলের কাছেই অজানা নয়। তিনি আমাদের সিংগাইর আওয়ামী লীগকে পরিবারিক লীগ বানিয়ে ফেলেছেন। তিনি নিজে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। এছাড়া, দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ত্যাগী নেতা মাজেদ খানকে সরিয়ে ভাগ্নে শহিদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক বানান। এমন অনেক রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা তাকে ছেড়ে দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর নির্বাচন করেছেন।

জয়মন্টপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন আগে এক নির্বাচনি জনসভায় জেলার দুই শীর্ষ নেতাকে নিয়ে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন মমতাজ বেগম। তাছাড়া নিজের সৎ মা তিন বোনদের খোঁজখবর নেন না এবং তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় তারা প্রকাশ্যে দেওয়ান জাহিদের সমর্থন করেন। এমন ঘটনায় তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে বলে তার অভিযোগ।

বলধারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাজেদ খান, ‘দেওয়ান জাহিদ অনেক ভালো লোক, দানবীর পরোপকারী। ওনি ২০ বছর ধরে সিংগাইর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানের প্রায় ৮০ টি মসজিদ-মাদ্রাসা তার দানে চলে এবং গোবিন্দল মাদ্রাসার এতিমখানার ছেলেমেয়েরা উনার দানে লেখাপড়া খাওয়া দাওয়া চালায়। তার নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় আড়াইশ অটোরিক্সা দিয়েছেন।

দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু বলেন, ‘আমার এই জয় সকলের। দল মত নির্বিশেষে আমাকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছেন তাদের প্রতি আমি ঋণী। আমি নির্বাচনের আগে যেসব প্রতিশ্রতি দিয়েছি সেগুলো এখন বাস্তবায়নের পালা। প্রথমেই আমি সিংগাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক সড়কের উপর শহিদ রফিক সেতুর টোল ফ্রি করার জন্য কাজ করবো।

সিংগাইর, হরিরামপুর উপজেলা সদরের তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ- সংসদীয় আসন। আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৯ জন। এই আসনের ১৯৩ টি ভোটকেন্দ্রে দেওয়ান জাহিদ আহমেদ পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট। তার নিকটতম হেভিওয়েট প্রার্থী মমতাজ বেগম পেয়েছেন ৮২ হাজার ১৩৮ ভোট। এই আসনে মোট ভোটের ৪১.৭০ শতাংশ ভোট গ্রহন হয়েছে।