আগুন নেভাবে রোবট কার, সড়ক দুর্ঘটনা ঠেকাবে অ্যালার্ম
প্রতিযোগীতায় বিজয়ীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়ার পর জানানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের সেরা প্রকল্পগুলো এবার যাবে আঞ্চলিক পর্বে। সেখানে জয়ীরা সুযোগ পাবে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার।

এক মুহূর্তের অসাবধানতায় আগুন ছড়িয়ে পড়ল পুরো ভবনে। আশপাশে কেউ নেই, দমকলকর্মীরা আসতেও সময় নেবে। ঠিক তখনই সেন্সরচালিত একটি ক্ষুদ্র গাড়ি আগুন শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে। এটাই ভবিষ্যতের স্বপ্ন, আর সেই স্বপ্ন দেখিয়েছে মানিকগঞ্জের তরুণ উদ্ভাবকরা।
ন্যাশনাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের (এনপিআই) ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাগর চন্দ্র সূত্রধর, ফারদীন হাসান ও ইসরাফিল তৈরি করেছেন ‘অটোমেটিক ফায়ার ফাইটিং রোবট কার’। প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করা এই প্রকল্প প্রমাণ করেছে কল্পনা যখন প্রযুক্তির সঙ্গে মিশে যায়, তখন বাস্তব সমস্যারও কার্যকর সমাধান তৈরি হয়।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অ্যাক্সেলারেটিং অ্যান্ড স্ট্রেংদ্নিং স্কিলস ফর ইকনমিক ট্রান্সফরমেশন (এসেট) প্রকল্পের আওতায় এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় শনিবার দুপুরে এনপিআইয়ের মিলনায়তনে আয়োজিত হয় ইনোভেশন প্রতিযোগিতা। এনপিআইয়ের পাঁচটি বিভাগ থেকে মোট ১১টি দল অংশ নেয়।
প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে কম্পিউটার টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত প্রকল্প ‘সার্ভিল্যান্স সিকিউরিটি সিস্টেম ইউজিং পাইথন’। চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. ফামান আনোয়ার, মো. নাজমুল হাসান ও আব্দুল্লাহ আল আসিফ এই প্রকল্পটি তৈরি করেন। এটি মূলত একটি স্মার্ট নজরদারি ব্যবস্থা, যা ক্যামেরার মাধ্যমে চলাচল শনাক্ত করতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা বার্তা পাঠাতে সক্ষম। শিক্ষার্থীদের ভাষায় বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহার এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং অপরিহার্য প্রয়োজন।
অন্যদিকে, তৃতীয় স্থান অধিকার করে ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ, মো. সাদিক হাসান ও আকাশ মিয়া। তাদের উদ্ভাবন ‘অ্যান্টি স্লিপ অ্যালার্ম ফর ড্রাইভার’। দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানোর পর অনেক চালকের চোখে ঘুমঘুম ভাব চলে আসে, যা দুর্ঘটনার বড় ঝুঁকি তৈরি করে। এই যন্ত্র চালকের মাথার অবস্থান শনাক্ত করতে পারে এবং ঘুমঘুম ভাব দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বাজিয়ে সতর্ক করে দেবে।
বাকি আট প্রকল্পের মধ্যে ছিল- অটোমেটিক স্লাইডিং ব্রিজ, স্মার্ট অ্যাম্ফিবিয়াস কার, ফোর সিলিন্ডার ডিজেল ইঞ্জিন অপারেটিং সিস্টেম, স্বয়ংক্রিয় ঘাস কাটার যন্ত্র ও কীটনাশক প্রয়োগ ব্যবস্থা, ফ্লোটিং ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে স্থাপনা নির্মাণ, স্মার্ট রোড জংশন, চিকেন কাটলেট এবং ওয়েদার মনিটরিং অ্যাপ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) ফারজানা প্রিয়াঙ্কা। তিনি বলেন, ‘ইনোভেশন ও ইনভেনশন দুইটি আলাদা বিষয়। আমাদের তরুণেরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারে তাদের উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে। এগুলো শুধু শিক্ষার পরিধি বাড়ায় না, কর্মসংস্থানের নতুন পথও তৈরি করে।’
এছাড়া কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সংযুক্ত কর্মকর্তা (আইসিটি সেল) শাকিলা রহমান, বাংলাদেশ প্রাইভেট পলিটেকনিক এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন (বিপিপিইএ)-এর সভাপতি প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী এবং গ্রিড কনজারভেশন ডিপার্টমেন্ট আরিচার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. গিয়াস মাহমুদ তরুণ উদ্ভাবকদের প্রশংসা করেন।
প্রতিযোগিতায় সঞ্চালনা করেন এনপিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ ফারুক হোসাইন এবং সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ প্রকৌশলী শামসুর রহমান।
বিজয়ীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়ার পর জানানো হয় প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের সেরা প্রকল্পগুলো এবার যাবে আঞ্চলিক পর্বে। সেখানে জয়ীরা সুযোগ পাবে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার।