জোড়াতালি দিয়ে চলছে ঘিওরের কুস্তা বেইলী সেতু

Jun 30, 2023 - 20:26
 0  24
জোড়াতালি দিয়ে চলছে ঘিওরের কুস্তা বেইলী সেতু

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কুস্তা এলাকায় দশ বছর আগেই কুস্তা বেইলী সেতুটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম টিকিয়ে রাখা হয়েছে সেই সেতুটিকে। তার ওপর দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছেন ২০ গ্রামের লাখো মানুষ। জরাজীর্ণ এই বেইলী সেতুটি আবারো যেকোনো সময় ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঘিওর উপজেলা কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে ঘিওর উপজেলার কুস্তা এলাকায় প্রায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ইছামতী নদীর ওপর ওই বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। এই সেতুর ওপর দিয়ে ঘিওরের কুস্তা, নারচী, বেগুন নারচী, শ্রীধরনগর; পাশের দৌলতপুর উপজেলার খলসী, কুমুরিয়া, বিনোদপুর, কাটাখালী, শ্যামগঞ্জ, জিয়নপুরসহ দুটি উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ ও বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। ২০১২ সালে জরাজীর্ণ সেতুটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের বন্যায় সেতুটি ধসে যাওয়ার পর অস্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়। সেতুটির পূর্ব প্রান্তে ভারী যানবাহন বন্ধে প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হয়েছে। মানিকগঞ্জের ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার ২০ গ্রামের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার লাখো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। জরাজীর্ণ সেতুর পশ্চিম পাশে সরকারি খাদ্যগুদাম, মসজিদ, কবরস্থান ও শশ্মাণ আর পূর্ব পাশে রয়েছে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর হাট, বাজার, স্কুল-কলেজসহ নানা স্থাপনা। বিকল্প না থাকায় তার ওপর দিয়েই ছোট যানবাহন ও মানুষকে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। প্রতিদিনের বাজার ছাড়াও বুধবার বসে সাপ্তাহিক ঘিওর হাট। সেতু দিয়ে ভারি যানচলাচল বন্ধ থাকায় হাটে পণ্য আনা নেওয়া করতে নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। সেই সাথে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।

দৌলতপুরের জিয়নপুর থেকে যাত্রী নিয়ে আসা সিএনজি গাড়ি চালক খালেকুর রহমান জানান, প্রতিদিন এই সেতুর উপর দিয়ে ৩ থেকে ৪ বার যাতায়াত করতে হয়। যাত্রীদের নিয়ে যখন এই ভাঙা ব্রিজ পাড় হই তখন খুব ভয় লাগে কখন মনে হয় ভেঙে পড়ে যায়। যাত্রীদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করে। অনেক সময় রোগী নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়। তখন যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায় কে নেবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আওয়াল মিয়া জানান, এই সেতুটি যাতায়াতের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর আগে দুই দফায় ধসে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে জোড়াতালি দিয়ে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ছোট গাড়ি ও মানুষের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সেতুর সামনের অংশে আবারো ফাটল ধরেছে। পিলারের পাশ থেকে মাটি সরে গেছে। বর্ষার আগেই যদি সেতুটি মেরামত করা না হয় তাহলে আবারো ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঘটতে পারে।

ঘিওর সরকারি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া কলেজ শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান জানান, খুব ভয় হয় এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে। সেতুর বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে ফাঁকা হয়ে গেছে। আগের বছর পূর্বপাশ ধসে যাওয়ার কারণে আমাদের অনেক দূর ঘুরে যাতায়াত করতে হয়েছে। যদি এখানে দ্রুত একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হয় তাহলে আমাদের দুর্ভোগ কমে যাবে।

সেতুটির বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুর রহমান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি অপসারণ করে সেখানে আরসিসি সেতু করা হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হবে।

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান জানান, গত বন্যায় সেতুটির একপাশ ধসে যায়। তখন জরুরি ভিত্তিতে তা মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে এ বছর সেখানে টেকসই সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু করা হবে।