স্ত্রীকে জখম করে স্বামী পলাতক, আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় শঙ্কায় স্বজনরা

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে ধারালো ছুরি দিয়ে গুরুতর জখম করেছে তারই স্বামী উজ্জ্বল। গুরুতর আহত অবস্থায় স্ত্রী ইয়াসমিন বর্তমানে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালে আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। অপরদিকে, ঘটনার পাঁচদিন পার হয়ে গেলেও কোন আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় শঙ্কিত ইয়াসমিনের স্বজনরা।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) উজ্জ্বলসহ আরো ছয়জনকে আসামী করে ইয়াসমিনের মামা মো. দেলোয়ার হোসেন মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন- ইয়াসমিনের ভাসুর মো. সিদ্দিক মিয়া, মো. দুদুল মিয়া, চাচা শ^শুর তিতু মিয়া, তোতা মিয়া, নোনাশ চায়না ও নোনাশের স্বামী আয়নাল। তারা সবাই পলাতক রয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৮ বছর আগে পারিবারিকভাবে ইয়াসমিনের সাথে বিয়ে হয় উজ্জ্বলের। বিয়ের পর থেকেই উজ্জ্বল পরিবারের অন্য সদস্যদের কু-প্ররোচনায় ও কু-পরামর্শে ইয়াসমিনের কাছে বিভিন্ন সময়ে যৌতুক দাবী করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। পরে ইয়াসমিন বাবার বাড়ি থেকে বিভিন্ন সময়ে ২০ লাখ টাকা উজ্জ্বলকে এনে দেয়। সেসব টাকা উজ্জ্বল মাদক সেবন ও জুয়া খেলে নষ্ট করে ফেলে। টাকা শেষ হবার পর আবারো ইয়াসমিনের কাছে টাকা দাবি করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ আগস্ট সকাল ১০ টার দিকে উজ্জ্বল তার ভাই মো. সিদ্দিক মিয়া ও মো. দুদুল মিয়াকে সাথে নিয়ে তারই বাড়ির সামনে জুয়া খেলার জন্য ইয়াসমিনের কাছে আড়াই লাখ টাকা দাবি করে। টাকা অপারগতা প্রকাশ করলে ইয়াসমিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারিভাবে ধারালো ছুরি দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর জখম করে তারা। ইয়াসমিনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন আসলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় তারা। তাকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ইয়াসমিনের অবস্থা আশংঙ্কাজনক হলে তাৎক্ষনিকভাবে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ইয়াসমিনের মামা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই উজ্জ্বল নানা সময়ে যৌতুকের দাবিতে আমার ভাগ্নিকে নির্যাতন করত। যৌতুক বাবদ উজ্জ্বলকে আমরা ২০ লাখ টাকা খরচ করে দুইটি দোকান করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে মাদকাসক্ত ও জুয়া খেলায় আসক্ত হওয়ায় সব টাকা নষ্ট করে ফেলে। এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে আমার ভাগ্নি সন্তানদের নিয়ে সাভারে থাকতো। গত ১৭ আগষ্ট সকালে ইয়াসমিন তার মেয়ের সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য বাড়ি আসে। সার্টিফিকেট নিয়ে যাওয়ার সময় উজ্জ্বল তার বাড়ির সামনে থেকে টেনে হিচরে নিয়ে নৃশংস্যভাবে ধারালো ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুত্বর জখম করে। ইয়াসমিন সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।’
ইয়াসমিনের মামি আসমা বলেন, উজ্জ্বল খুব ভয়ানক ও মাদকাসক্ত। সে যেকোন সময় যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। সে আমার ভাগ্নিকে যেভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে জখম করেছে তাতে করে আমরা খুব নিরাপত্তাহীনতায় আছি। ঘটনার তিনদিন পার হলেও কোন আসামী গ্রেপ্তার হয়নি। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক যাতে ভবিষ্যতে এমন কাজ কেউ করতে সাহস না পায়।
সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালের ডা. সজিব জানান, ‘গত ১৭ আগস্ট গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি হন ইয়াসমিন। এ পর্যন্ত ইয়াসমিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় সার্জারি করা হয়েছে। তার অবস্থা এখনো আশংঙ্কামুক্ত নয়। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন।’
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আসামী উজ্জ্বলের বাড়ি থেকে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ও একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কাজ করছে। খুব শিগগির আসামীদের গ্রেপ্তার করা হবে।