মাকে হত্যার দায়ে মেয়েসহ ২ জনের যাবজ্জীবন, ২ জনের মৃত্যুদণ্ড

মানিকগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ সেওতা এলাকায় চাঞ্চল্যকর মাহমুদা আক্তার হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদন্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, দুইজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত। অপর আসামী নুর বক্সকে এ মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক জয়শ্রী সমদ্দার আসামীদের উপস্থিতিতে এই রায় দেন।
মৃত্যুদন্ড দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন- ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ আড়াকুল (জিন্দাপীর) এলাকার আব্দুল বারেকের ছেলে মো. রাকিব হোসেন, নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার পূর্ব গোলমন্ডা এলাকার মো. মাহফুজার রহমান। যাবজ্জীবন প্রাপ্তরা হলেন- ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ আড়াকুল (জিন্দাপীর) এলাকার মো. খোরশেদ আলমের ছেলে মো. শফিউর রহমান নাঈম, মানিকগঞ্জ পৌরসভার দক্ষিণ সেওতা এলাকার জহিরুল ইসলাম ও নিহত মাহমুদা আক্তারের কন্যা জুলেখা আক্তার জ্যোতি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে মামলার বাদী জহিরুল ইসলাম হাটার জন্য বাইরে যায়। এসময় পরে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে বাসায় ফিরলে মেয়ে জ্যোতি বাড়ির গেট খুলে দেন। এরপর মেয়েকে তার মায়ের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে মা শুয়ে আছে বলে জানায় জ্যোতি। জহিরুল বাড়ির ৫ম তলায় পোষা কবুতরের বাসার জন্য নেট টানাতে যান। কাজ শেষ করে সাড়ে ৯ টার দিকে জ্যোতিকে ভীত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। পরে জ্যোতি কোন কথা না বলে ২য় তালার শয়ন কক্ষে নিয়ে যায়। জহিরুল তার স্ত্রীকে অনেক ডাকাডাকি করলে কোন সাড়া না দিলে লেপ ধরে টান দিয়ে স্ত্রী’র জিহ্বা বাহির করা ও নাকে রক্ত দেখতে পান। এসময় তার আর্তচিৎকারে আশেপাশের রুমের ভাড়াটিয়ারা চলে আসেন এবং মাহমুদাকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। শ্বাসরোধ করে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে মেয়েসহ মোট পাঁচজনকে আসামী করে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন মাহমুদা আক্তারের স্বামী জহিরুল ইসলাম। ২০২০ সালের ৩১ মে মানিকগঞ্জ সদর থানার এসআই মো. শামীম আল মামুন মামলায় জড়িত থাকার দায়ে ৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তে উল্লেখ করেন, জুলেখা আক্তার জ্যোতি জেদী ও বেপরোয়া ছিলেন। ঘটনার প্রায় তিন বছর আগে ঢাকার ধামরাই উপজেলার গোলাকান্দা গ্রামের মারুফের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেন। বিয়ের দুই বছর পর ঢাকার কেরাণীগঞ্জের নাঈমের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ায় জ্যোতি। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে স্বামীর সাথে ডিভোর্স হলে মানিকগঞ্জে বাবার বাড়ি চলে আসে জ্যোতি। নাঈমের সাথে জ্যোতির অবৈধ মেলামেশার বিষয়টি তার বুঝতে পেরে অন্যত্র বিয়ে দিতে চাইলে জ্যোতি নাঈমের সহায়তা নিয়ে তার মাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নাঈম মামলার অন্য আসামীদের সাথে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে মাহমুদা আক্তারকে হত্যার চুক্তি করেন। পরিকল্পনা মাফিক ঘটনার আগেরদিন বিকেলে জ্যোতির কক্ষে গিয়ে অবস্থান করে নাঈমসহ মোট চারজন। ঘটনার দিন সকালে জ্যোতির বাবা বাসা থেকে বের হলে সকল আসামীরা জ্যোতির মায়ের কক্ষে গিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহটি খাটের উপরে রেখে লেপ দিয়ে ঢেকে রেখে কৌশলে পালিয়ে জায়।
মামলায় মোট ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহনের পর যুক্তিতর্ক শেষে দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড ও দুইজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেন মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসামীদের উপস্থিতিতে এই রায় দেন।
মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি মো. আব্দুস সালাম সন্তোষ প্রকাশ করলেও রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার অভিমত ব্যক্ত করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বাদশা।