হরিরামপুরে ৯৪ কোটি টাকা ব্যায়ে পদ্মার তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু

নদী ভাঙন কবলিত এলাকা মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা। এই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১০টি ইউনিয়নই পদ্মার ভাঙনের শিকার। বিভিন্ন সময় পদ্মার ভাঙনে বেশকিছু গ্রামসহ বিদ্যালয়ের ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ভবনসহ নানা স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। তাই এবছর হরিরামপুরের হারুকান্দি ইউনিয়ন ও ধুলসুরা ইউনিয়নের সাড়ে তিন কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হয়েছে। এই কাজ শেষ হলে ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হরিরামপুর উপজেলার হারুকান্দি ইউনিয়ন ও ধুলসুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে এই তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে ধুলসুরা গ্রামে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে, ২০১৬ সালে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রাম থেকে হারুকান্দি গ্রাম পর্যন্ত ৮.৮ কিলোমিটার, ২০২২ সালে ধুলাসুড়া এলাকার ১.২ কিলোমিটার, গোপীনাথপুর গ্রামে ৯২৫ মিটার নদীর রক্ষার জন্য জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
হরিরামপুর উপজেলার ধুলসুরা গ্রামের মোহাম্মদ রহমান মিয়া জানান, ‘প্রত্যেক বছর আমাগো গ্রাম বর্ষার সময় ও পরে ভাইঙ্গা যায়। কত ঘরবাড়ি চোখের সামনে নদীতে চলে গেছে তার হিসাব নাই। শুধুই কি ঘরবাড়ি আমাগো বিঘায় বিঘায় ক্ষেতও চইলা গ্যাছে গা এই নদীতে। যদি এই বস্তা ফ্যালান শেষ হয় তাইলে এইবার হয়তো আমরা রক্ষা পাইবার পারি।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘হরিরামপুর উপজেলা পদ্মা নদীর বাম তীরে অবস্থিত। পদ্মা নদী এই উপজেলার ২২ কিলোমিটার জুরে বহমান। এ উপজেলাকে রক্ষার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে জিও ব্যাগ ও ব্লক ফেলে ভাঙন রক্ষার কাজ করেছি। এসব কাজ না হলে এতো দিনে উপজেলা পরিষদ, থানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যেত।এ বছর আমরা ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে হারুকান্দি থেকে ধুলসুরা ইউনিয়নের সাড়ে তিনকিলোমিটার কাজ করবো। আশা বর্ষার আগেই এই কাজ শেষ হবে।’
এদিকে, বুধবার বিকেলে ৯৪ কোটি টাকা ব্যায়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যৌথভাবে এই তীর সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু।
দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু বলেন, ‘হরিরামপুর উপজেলা ভাঙন কবলিত। হারুকান্দি থেকে ধুলসুরা ইউনিয়নের সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী তীর রক্ষার কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনী। তারা প্রতিমিটারে পাঁচটি করে এই জিও ব্যাগ ফেলছে। ফেলার কাজ শেষ হলে তাদের ডুবুরিদল দিয়ে দেখবেন যে কোথাও ফাঁকা আছে কিনা? এই কাজ শেষ হবে বর্ষার আগেই। এখানে প্রতিবছরই নদীগর্ভে ঘরবাড়ি, ক্ষেতসহ নানা স্থাপনা নদী গর্ভে চলে যায়। আমার নির্বাচনী ইস্তেহারে প্রথম প্রায়োরিটি ছিল এই উপজেলার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা। সেটার জন্য আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি আমার সময়কালের মধ্যেই এখানে স্থায়ী বাঁধের কাজ সম্পন্ন হবে।’
এসময় হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।